সংবাদ শিরোনামঃ
রমজাননগরে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু ন্যায্যতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে সিসিডিবির জলবায়ু সহনশীল জনগোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যে এনজিও গনমাধ্যমকর্মী ও ইউ পি সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ভূমিহীনদের জায়গায় ফেরত ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহায় পেতে মানববন্ধন  শ্রীমঙ্গলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জমি দখল স্কুল পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচেতনতামূলক ভিডিও প্রদর্শনী কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলায় জামায়াতে ইসলামির কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে  কালিগঞ্জের কৃতি সন্তান ড. রেজাউল করিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি শ্যামনগরে সরকারি খাল থেকে অবৈধ পাটা অপসারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ আগামী ২৬ শে সেপ্টেম্বর কি ঘটতে যাচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারে যেসব কাজ করতে পারবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নারী ও যুববান্ধব বাজেটের অন্তরায়

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নারী ও যুববান্ধব বাজেটের অন্তরায়

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশে প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। গ্রামের মানুষ আরো অধিক সংখ্যক দরিদ্র। তাদের দারিদ্র্যের গভীরতা ও স্থায়িত্ব অধিক। তবে সবচেয়ে অধিক সংখ্যক ও অধিক মাত্রার দরিদ্র গ্রামীণ নারী সমাজ। এদেশের গ্রামীণ নারী সমাজকে বুঝতে হলে দারিদ্র্যের জেন্ডার দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। কারণ এর ওপর ভিত্তি করে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অসমতা এবং বৈষম্যের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে। বাস্তবে পারিবারিক সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনে নারীর অধস্তনতা এবং পুরুষ কর্তৃক শাসন-শোষণ অর্থনৈতিক জীবনেও প্রতিফলিত হয়।

স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন বাজেটে নারী ও যুবদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাদের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও প্রত্যাশার বিষয়টি চিন্তা করে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরী। স্থানীয় সরকারের বাজেটে নারী সমাজের অগ্রগতির বিষয়টিতে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমরা জানার চেষ্টা করেছি সাতক্ষীরার ৭৮ ইউনিয়ন, দুইটি  পৌরসভা ও ৭টি উপজেলা পরিষদ পর্যায়ে নারী ও যুবদের জন্য যে বাজেট প্রস্তুত বাজেট করা হয়, সে সম্পর্কে তারা জানেন কিনা। তাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা।
তাদের স্বাস্থ্য, দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ তার ৮০ শতাংশ অব্যবহৃত থেকে যায়। নারী ও যুবদের অধিকাংশই বাজেট সম্পর্কে জানেন না। এই বাজেটে তাদের অংশগ্রহণ একেবারেই নেই। বরাদ্দ থাকলেও তার মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। আবার এটা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বাকি ৮০ শতাংশ খরচ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, পরিষদের অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে এই বিষয়ে নজর দেওয়া হয় না।

স্থানীয় নারী ও যুবরা মনে করেন যে, এ ধরনের বাজেট প্রকল্পগুলোয় যদি তাদের সম্পৃক্ত করা হয়, তাহলে বাজেটে তাদের প্রত্যাশা ও করণীয় সম্পর্কে তারা ভূমিকা রাখতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তারা অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতে পারবেন। এটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখবেন। ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছলিমপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম, বলাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সালাম, সাতক্ষীরা পৌরসভার পলাশপোল গ্রামের হাবিবুল্লাহ বাহার ও দেবহাটা ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার বলেন, তারা যখন এক হয়ে ছোট ছোট দলে তাদের দাবি নিয়ে কথা বলতে যায়, তখন তাদের জানানো হয় তাদের জন্য সেভাবে কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। যদিও কোনো বাজেট থেকে থাকে, সেটা তাদের জানানো হয় না।

নারী ও যুবদের বাজেটে তাদের সম্পৃক্ত করা হলে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে। তাদের চাওয়া হলো তাদের জন্য যখন বাজেট প্রস্তাব করা হয়, তখন তাদের মতামত নেয়া। মাঠপর্যায় থেকে যখন তাদের জন্য নানা রকম দাবি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা,  জেলা পরিষদে জানানো হয়, তখন তারা তাদের বাজেটের বিষয়টি এড়িয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ নিয়েও তারা সংশয় প্রকাশ করেন। তাদের চাহিদা অনুসারে বাজেট পর্যাপ্ত না হলেও যেটা বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটাও ঠিকভাবে পায় না। তাদের জানানো হয় না যে এই বাজেটের ব্যয়ের খাত কী। বা কীভাবে কোথায় কোন কাজে এ বাজেট ব্যয় করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাদের ইচ্ছেমতো বাজেট ব্যয় করেন। ফলে এ বাজেট সম্পর্কে নারী ও যুবরা অন্ধকারে থাকে।

সাতক্ষীরা জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। এখানে ছেলেমেয়ের বিভাজন আছে। দেশের ৫৩ শতাংশ যুব নারী ১৮ বছর বয়সের  আগেই বিয়ের মতো পারিবারিক দায়বদ্ধতায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া যুবসমাজের ৩৪ শতাংশ কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নেই। তারা সমাজের কোন অংশে ভূমিকা রাখছে, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। নারী উন্নয়ন কমিটি করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, সেগুলো নিয়ে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কোনো কাজ হয় না। ফলে যুবকদের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মাঠপর্যায়ের যুবদের হাতে পৌঁছায় না।

ইউনিয়ন পরিষদ আইনে ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি ‘ওয়ার্ড সভা’ গঠন করার নিয়ম রয়েছে। এই ‘ওয়ার্ড সভার সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য উপদেষ্টা থাকবেন। ওয়ার্ড সদস্যের নেতৃৃত্বে বছরে দুবার এই ‘ওয়ার্ড সভার সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম সহ অন্যান্য বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ, ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত, বাস্তবাযয়নযোগ্য স্কিম ও উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রধিকার নিরূপণ করা হবে। মূলত এখানেই নিহিত রয়েছে নারী ও যুব বান্ধব বাজেটের প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত। কিন্তু বাস্তবতায় কোন ইউনিয়নে ‘ওয়ার্ডসভার অস্তিত্ব নেই। এ বিষয়ে জনসাধারণরাও কিছু জানেন না। আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামরুল নাহার কুসুম বলেন, তিনি কখনো ‘ওয়ার্ড সভা গঠনের বিষয়টি জানেন না। একই কথা বলেন ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের সদস্য কুলসুম খাতৃন। তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

ইউনিয়ন পরিষদ আইনে ‘পারিবারিক বিরোধ নিরসন, নারী ও শিশু বিষয়ক স্থায়ী কমিটি’ নামে একটি স্থায়ী কমিটি গঠনের নিয়ম রয়েছে। এই কমিটির সভাপতি হবেন ইউনিয়ন পরিষদদের একজন সদস্য (নারী বা পুরুষ)। পরিষদ সচিব অথবা একজন কর্মচারী হবেন সদস্য সচিব। আরো চারজন সদস্য থাকবেন এই কমিটিতে। এরা হলেন প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন মহিলা শিক্ষক, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান একজন স্থানীয় মহিলা কর্মী, স্থানীয় একজন শিক্ষিত নারী এবং স্থানীয় একজন সমাজকর্মী বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি। এই কমিটি ‘ওয়ার্ড সভার সিদ্ধান্তবলী নারী বিষয়ক সকল কার্যক্রম পর্যালোচনা করে নারী উন্নয়নের জন্য একটি দীর্ঘমেযয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের সুপারিশ দাখিল করবেন। এখান থেকেই ইউনিয়ন পরিষদ বার্ষিক বাজেটে কর্মসূচি গ্রহণ ও ব্যায় বরাদ্দ করবেন। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো দুই একটি ছাড়া কোন ইউনিয়ন পরিষদে এই স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়নি। কলারোয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাজেদা নারী উন্নয়ন পরিষদের সভানেত্রী লতিফা আক্তার হেনা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সাথে তাদের সংগঠন অনেক কাজ করেছে। কিন্তু এ ধরনের কমিটির কোন সন্ধান তিনি পাননি।  দেবহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাধবী মন্ডল ও আনুলিয়া ইউনিয়নের সদস্য সালমা ওদুদ বলেন, তাদের ইউনিয়নে পারিবারিক বিরোধ নিরসন, নারী ও শিশু বিষযয়ক স্থায়ী কমিটি’ নেই।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর ঘোষণা পত্রে নারী উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী ও যুব বাজেট প্রণযয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, সংবেদনশীল বাজেট যথাযথ বাস্তবায়ন করা এবং মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামোর আওতায় বাজেট প্রক্রিয়া ধারাবাহিক অনুসরণ অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের নারী ও যুব উন্নয়নের লক্ষ্য অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এই কারণেই রাষ্ট্রীয় বাজেট অনুসরণ করে ইউনিয়ন পরিষদে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করতে নারী সদস্যরা কোন ভূমিকা রাখে কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করা হয়। দেখা গেছে ইউনিয়ন পরিষদে বাজেট প্রণয়নে নারী সদস্যরা কোন ভূমিকা রাখেন বলে কোন সাধারণ নারী মতামত দেয়নি। নারী সদস্যদের ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুমিত্রা রানী ও মিলন হরি, বরদল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজা খাতুন ও শ্রাবন্তী বৈরাগী বলেন, বাজেট সম্পর্কেও তাদের কোন ধারণা নেই। এ বিষয়ে নারী সদস্যের ভূমিকা সম্পর্কে ও তাদের কোন ধারণা নেই।

ইউনিয়ন পরিষদে বাজেট প্রণয়নে নারী সদস্যরা কোন ভূমিকা রাখেন না। নারী সদস্যরা ভূমিকা না রাখার কারণ অনেকগুলো। বাজেট সম্পর্কে নারী  সদস্যদের ভূমিকা সম্পর্কে কাদাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুভাষচন্দ্র মন্ডল ও তালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শেখ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অধিকাংশ নারী  সদস্যদের বাজেট সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। বাজেট সম্পর্কে নারী সদস্যদের ভূমিকা রাখার মতো যথাযথ যোগ্যতা নেই। বাজেটে সবাই তারা নিজেদের প্রস্তাব সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। তবে সাতক্ষীরা ও কলারোয়া পৌরসভার চিত্র ভিন্ন।

৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ২৩৪ জন নারী সদস্য রয়েছেন। এরমধ্যে ৯০ ভাগ নারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পার করতে পারেননি। অধিকাংশ নারী সদস্য সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী পাস। বুড়িগোয়লিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভাবতোষ কুমার মন্ডল ও মথুরেশ পুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জিএম আব্দুল কাদেরের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, পারিবারিক ও শিক্ষা দীক্ষায় অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন নারীরা নারী প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হননি এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ফলে যোগ্যতার অভাবের কারণে তারা অনেক কিছুই করতে পারছেন না। এমনকি অনেক নারী সদস্য আছেন যারা পুরুষ  সদস্যদের সহযোগিতা ছাড়া কোন কাজই ঠিকমতো করতে পারেন না।

এছাড়াও আর্থসামাজিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে নারীদের ক্ষমতার চর্চার ইতিহাস বিরল। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াসের কথা বলা হলেও দেখা গেছে যে, নারী প্রতিনিধিরা কার্যত ক্ষমতা চর্চা করতে পারছেন না। অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রবল প্রতাপের উপর নির্বাচিত নারী সমাজ তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করেছে বলে বর্তমানে প্রতীয়মান হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের সুনির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের নারী  সদস্যদের কাজের কোন নীতিমালা নেই। নারী  সদস্যের দায়িত্ব-কর্তব্য সুনির্দিষ্ট না থাকায় তাদের দায়িত্ব পালনে পরিষদের চেয়ারম্যান বা প্রভাবশালী পুরুষ সদস্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়।

ইউনিয়ন পরিষদে বাজেট প্রণয়নে কোন ভূমিকা রাখেন না যে সকল নারী সদস্য তাদের সকলেই বলেছেন চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যদের অসহযোগিতার কারণে ভূমিকা রাখতে পারেন না। অর্থাৎ নারী সদস্যরা মনে করেন চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যদের এ বিষয়ে কোন আন্তরিকতা নেই এবং নারী  সদস্যদের মতামতও গ্রহণ করা হয় না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও  পুরুষ সদস্যদের অসহযোগিতা ও নারী সদস্যদের সীমাবদ্ধতার কারণে  ইউনিয়ন পরিষদের নারী ও যুব বান্ধব বাজেট প্রণয়নে নারী সদস্যরা কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। নারীদেরকে এ বিষয়ে স্বাবলম্বী করতে হবে। নারীর সুযোগ তৈরি হলেই বাজেটে নারীর অধিকার নিশ্চিত হতে পারে।

যেসব ক্ষেত্রে নারীর ও যুবরা পিছিয়ে আছে সেসব ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমপর্যায়ে তুলে আনার জন্য দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নারীর প্রতি বিশেষ পক্ষপাত দেখিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের নারী ও পুরুষের ভূমিকা সৃজনশীলতা সম্ভাবনা ঘাটতি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। নারী ও যুবদের মধ্যে বিদ্যমান সম্ভাবনাকে স্ফুরিত করা এবং তাদের সৃজনশীলতাকে সহায়তার জন্য বাজেটে সঠিক পদক্ষেপ ও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

স্থানীয় সরকার প্র্রতিষ্ঠানে সম্ভ্রন্ত, শিক্ষিত, মর্যাদাশীল পরিবারের শিক্ষিত নারীদের পরিষদের নারী প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অধিকতর জরুরী। সে কারণে নারী প্রতিনিধির ক্ষমতা, কার্যাবলী, মর্যাদা ও সম্মানী বৃদ্ধি করে অন্তত এমন করা যেতে পারে যাতে নারী প্রতিনিধির পদটির প্রতি শিক্ষিত সচেতন ও মর্যাদাশীল পরিবারের সদস্যদের আগ্রহ বাড়ে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে বাজেট তৈরিতে নারী ও যুবদের মতামত নিতে হবে। বাজেটে নারী ও যুবদের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নারীদের সঙ্গে পরামর্শ করে বাজেট ব্যায়ের খাত নির্ধারণ করতে হবে। প্রশাসনিক কাজ গতিশীল করার জন্য যুব নারীদের জন্য আলাদা বিভাগ গঠন করা প্রয়োজন। নারী ও যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত বাজেট গ্রহণ করতে হবে। তাদের জন্য বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। নারী ও যুব সমাজ কিভাবে উদ্যোক্তা হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাজে তৈরি জরুরী। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। এ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যতদিন শক্তিশালী না হবে ততদিন বাজেটে নারী ও যুবদের স্থান নিশ্চিত হবে না।

তথ্যসূত্র: (১) যুব বাজেট, যুবদের উন্নয়ন, প্রত্যাশা ও করণীয়, প্রথম আলো, ১৫ নভেম্বর ২০২০, (২) ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯, (৩) ইউনিয়ন পরিষদের জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন ও নারী প্রতিনিধি, মুহম্মদ মনিরুল হক, বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষা।

লেখক: মীর খায়রুল আলম, সভাপতি, দেবহাটা প্রেসক্লাব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগীতায়- সুন্দরবন আইটি লিমিটেড